কোমর ব্যথা অনেক মানুষের জন্য একটি দৈনন্দিন সমস্যা। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন আঘাত, মেরুদণ্ডের বার্ধক্য (স্পন্ডাইলোসিস), বা খারাপ ভঙ্গিমা তে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা।
কিছু জিনিস আমরা প্রতিদিন করি, কিন্তু সেগুলো আমাদের পিঠের ব্যথাকে আরও খারাপ করে তুলতে পার। কোমর ব্যথা থেকে রক্ষা পেতে সচেতনভাবে এড়ানো উচিত এমন কিছু জিনিস এখানে দেওয়া হল।
1. নড়াচড়া না করে খুব বেশিক্ষণ ডেস্কে বসে থাকা: এই অভ্যাসটি সাধারণত সেই সমস্ত পেশাদারদের মধ্যে দেখা যায় যারা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে কাজ করে। এটি আপনার মেরুদণ্ড এবং আপনার কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্কগুলিতে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ডিস্ক গুলি খারাপ হয়ে যায় এবং কোমর ব্যথা হয়। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, আপনাকে প্রতি ঘন্টায় উঠতে বা হাঁটার চেষ্টা করতে হবে।
2. খারাপ ভঙ্গি তে বসে থাকা : এমন একটি চেয়ার ব্যবহার করুন যাতে আপনার পিঠ এবং উরু (thigh ) এর মধ্যে একটি নব্বই ডিগ্রি কোণ নির্মিত হয়। এমন একটি চেয়ার ব্যবহার করুন যা আপনার পিঠ এবং ঘাড়কে সমর্থন করে।আপনি এমন একটি ডেস্কও ব্যবহার করতে পারেন যা আপনাকে দাঁড়াতে দেয়। আপনার পিঠের উপর চাপ কমাতে ergonomic একটি কীবোর্ড এবং মাউস ব্যবহার করতে পারেন।
3. ভারী ব্যাগ বহন করা: এটি আপনার পিঠ এবং ঘাড় উভয়কেই চাপ দিতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি এক কাঁধে ব্যাগ বহন করেন। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, আপনার শরীরের উভয় দিকে ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। যে ব্যাগগুলিতে চাকা বা স্ট্র্যাপ রয়েছে যা উভয় কাঁধের উপর দিয়ে যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। ব্যাগগুলিকে অতিরিক্ত ভারী করা এড়িয়ে চলুন।
4. ভারী জিনিস ভুল উপায়ে বা সাহায্য ছাড়াই তোলা: এটি আপনার পেশী, ডিস্ক বা হাড়ের ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে যদি তোলার সময় আপনি আপনার পিঠ বাঁকিয়ে বা মোচড় দিয়ে কাজটি করেন। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, আপনার সর্বদা সঠিক উত্তোলন পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত, যেমন আপনার হাঁটু বাকিয়ে, পিঠ সোজা রেখে, এবং বস্তুটিকে আপনার শরীরের একদম কাছে এনে তবেই ভারী জিনিস উঠাবেন। তবে আপনার পক্ষে খুব ভারী জিনিসগুলি উত্তোলন করা এড়ানো উচিত এবং সাহায্যের জন্য কেউ কে ডেকে আনা বা প্রয়োজনে একটি কার্ট ব্যবহার করা উচিত।
5. নিষ্ক্রিয় থাকা: শারীরিক ভাবে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন আপনার পেশী এবং হাড়কে দুর্বল করে দেয়। এটি আপনার মেরুদণ্ডে আঘাত এবং ব্যথার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে এটি পিঠের ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, আপনার নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত এবং এমন এক্সারসাইজ করা উচিত যা আপনার কোমরের মূল পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে তোলে,
কিছু এক্সারসাইজ আছে যা আপনাকে আরও ফ্লেক্সিবল বা মোবাইল করে তোলে, যেমন যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং।আপনার সেসব এক্সারসাইজ এড়ানো উচিত যা আপনার জয়েন্টগুলিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলে বা চাপ দেয়, যেমন দৌড়ানো, লাফ দেওয়া বা বাস্কেটবল খেলা । কোনও নতুন ব্যায়াম প্রোগ্রাম শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
6. অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া: এটি মানুষ কে মোটা করে তোলে এবং এসিডিটি সৃষ্টি করে। এটি আপনার শরীরের ওজন বাড়িয়ে এবং আপনার মেরুদণ্ডের উপর অতিরিক্ত লোড রেখে পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, আপনার সবসময় স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া উচিত, যেমন ফল, শাকসবজি, বাদাম, মাছ। প্রদাহ সৃষ্টিকারী খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন, যেমন প্রসেসড ফুড, চিনি, অ্যালকোহল এবং রেড মিট. ইত্যাদ। স্বাভাবিক পরিসরের মধ্যে BMI রাখা উচিত অর্থাৎ ওজন নর্মাল থাকা উচিত। খুব বেশি বা খুব কম খাওয়া, দুটোই এড়ানো উচিত।
7. ধূমপান: ধূমপান মেরুদণ্ডে রক্ত প্রবাহ এবং অক্সিজেন সরবরাহকে হ্রাস করে। এটি নিরাময় প্রক্রিয়াকে স্লো করে এবং আপনার মেরুদণ্ডে বার্ধক্য বা এমনকি সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে পিঠের ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য, আপনার ধূমপান বন্ধ করা উচিত বা আপনার ধূমপানের অভ্যাস হ্রাস করা উচিত এবং প্রয়োজনে ডাক্তারি সহায়তা নেওয়া উচিত।
এগুলি এমন কিছু সাধারণ জিনিস যা আপনার এড়ানো উচিত। এটি কেবল পিঠের ব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করবে না, এটি চলমান পিঠের ব্যথার সমস্যার তীব্রতা রোধ করবে।
যদি আপনার ইতিমধ্যেই বেশ কিছুদিন ধরে পিঠে ব্যথা বা মেরুদণ্ডের সমস্যা থাকে, তাহলে আপনার সবসময় একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত এবং তার পরামর্শ অনুসরণ করা উচি। নিজের চিকিৎসা নিজেই ঠিক করে নেয়া উচিত নয়।
আপনি সর্বদা কলকাতার নিউটাউনে 'রাজারহাট পেইন ক্লিনিক' এর ডাঃ চিন্ময় রায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
Comments